শীর্ষ মাদক কারবারি জাফর আটক দৈনিক জনমুক্তি দৈনিক জনমুক্তি দৈনিক জনমুক্তি প্রকাশিত: ২:১৮ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২, ২০২৪ বিশেষ প্রতিনিধি:কক্সবাজারের টেকনাফে ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালানোর মূলহোতা টেকনাফ উপজেলার বিতর্কিত সাবেক চেয়ারম্যান জাফর আহমদ র্যাবের হাতে আটক হয়েছেন। তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক কারবারি উখিয়া-টেকনাফের সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির ‘সেনাপতি’ হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মামলা ও দুদকের মামলা চলমান রয়েছে। এসব মামলায় তিনি পলাতক ছিলেন। আটক জাফর আহম্মদ (৬৭) টেকনাফের উত্তর লেঙ্গুর বিলের মিঠাপানিরছড়া মৃত সুলতান আহম্মদের ছেলে। শুক্রবার রাতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজারের র্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (ল’ অ্যান্ড মিডিয়া অফিসার) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান।তিনি বলেন, গত রাতে ঢাকাস্থ পূর্ব বাসাবো এলাকার একটি বাসা থেকে তাকে আটক করা হয়। জাফর সীমান্তের শীর্ষ মাদক কারবারি ছিলেন। তাকে টেকনাফ মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর টেকনাফে জাফরের নেতৃত্বে তার ছেলে দিদার মিয়া, শাহজাহান, ইলিয়াছ, রাশেদ ও সালাহউদ্দীন প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালায় ও বিএনপি নেতাকর্মীদের বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর করে। এতে বহু লোক আহত হয়। এই ঘটনায় জাফরের বিরুদ্ধে বেশ কটি মামলা হলে তিনি তার ছেলেদের নিয়ে গাঁ ঢাকা দেন। এর আগে ৮ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর ৩০০ ফিট এলাকা থেকে জাফরের ছেলে শাহজাহান মিয়াকে গ্রেপ্তার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।র্যাব বলছে, টেকনাফের ভয়ংকর মাদক ইয়াবা সিন্ডিকেটের ডন মাদক সম্রাট আব্দুর রহমান বদি ওরফে ইয়াবা বদির বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে পরিচিত ছিলেন সাবেক আলোচিত উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহম্মদ প্রকাশ মাফিয়া জাফর। সংসদ সদস্য থাকাকালে আব্দুর রহমান বদি নিজের নির্বাচনী এলাকা টেকনাফকে পরিণত করেছিলেন মাদক, চোরাচালান, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও হত্যার স্বর্গরাজ্যে। আর সেই স্বর্গরাজ্য কার্যক্রমের বিশ্বস্ত সহচর ছিলেন জাফর। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ১ হাজার ২৭৫ জন মাদক কারবারিকে তালিকাভুক্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেই প্রতিবেদনে আব্দুর রহমান বদি ও তার ঘনিষ্ঠ সহচর জাফরকে ইয়াবা সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের অন্যতম মূলহোতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ২০১৯ সালে আত্মসমর্পণকারী মাদক কারবারিরা পুনরায় জামিনে বের হয়ে জাফরের নেতৃত্বে আবার সংঘবদ্ধ হয় এবং ইয়াবা ব্যবসার ব্যাপক প্রসার ঘটায়।মিয়ানমার সীমান্ত ঘেষা টেকনাফ সদর ইউনিয়নের লেঙ্গুরবিল গ্রামের বাসিন্দা সুলতান আহমেদের ছেলে জাফর প্রথম জীবনে ছিলেন পান বাজারের শ্রমিক। সেখান থেকে হয়ে ওঠেন শ্রমিকনেতা নামধারী দুর্ধর্ষ চাঁদাবাজ। টেকনাফ স্থলবন্দরের সব বাণিজ্যিক ট্রাককে কেন্দ্র করে রমরমা চাঁদাবাজি নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখা জাফর অবৈধ টাকা ও চিহ্নিত কয়েকজন ডাকাতদের ক্ষমতার জোরে একসময় নির্বাচিত হন ইউপি সদস্য। পরে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে দ্বিতীয় দফায় ইউপি চেয়ারম্যান হন তিনি। কালের পরিক্রমায় নানা রুপে আবির্ভূত হয়ে শুধুই বেড়েছে জাফরের অপরাধ কর্মকাণ্ড আর অবৈধ অর্থ। ওয়ান ইলেভেনের সময় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকাকালীন বদির সঙ্গে গড়ে ওঠে সখ্যতা। পরে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে শুরু হয় জাফরের নতুন অধ্যায়।ক্ষমতার পালাবদলের পর ২০০৯ সালে বিএনপি ছেড়ে সাবেক এমপি বদির হাত ধরে বিএনপি থেকে আওয়ামী রাজনীতিতে অনুপ্রবেশ করেন জাফর। বদির ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে ছেলেদের দিয়ে মাদকের সম্রাজ্য গড়ে তোলেন তিনি। অল্প সময়ের মধ্যে কালো টাকার কুমির বনে যান। ফলে নাম উঠে আসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মাদক তালিকায় শীর্ষ দশে। বদির বদান্যতায় কালো টাকার জোরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতির পদ বাগিয়ে নিয়ে দলটির সমর্থন ও বদির ছত্রছায়ায় চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে প্রথমবার উপজেলা চেয়ারম্যান হন। পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনে পরাজিত হলেও টাকার জোরে কক্সবাজার জেলা পরিষদ সদস্য হয়ে ক্ষমতাসীন পদ ধরে রাখেন। বদির একছত্র রাজনৈতিক ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। জনশ্রুতি রয়েছে, তিনটি উপজেলা নির্বাচনে তিনি অন্তত শত কোটি খরচ করেছেন। গত সংসদ নির্বাচনে উখিয়া টেকনাফ আসনে নৌকার পক্ষে তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ভোট ডাকাতি করে বদির গভীর আস্থা অর্জন করে ‘বদির সেনাপতি’ তকমা পেয়ে যান জাফর।এ বিষয়ে টেকনাফ মডেল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘আটক জাফর শীর্ষ মাদক কারবারি, তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা রয়েছে। শনিবার সকালে কারাগারে পাঠানো হবে এবং তার রিমান্ড চাওয়া হবে।’ SHARES আইন আদালত বিষয়: